ভারতের উত্তর প্রদেশে ভারী র্বষণে উজান থেকে নেমে আসা ঢলে রংপুরের কাউনিয়ায় তিস্তার পানি বৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে।কাউনিয়া পয়েন্টে বিপদসীমা অতিক্রম করে তিস্তা নদীর পানি প্রবাহিত হচ্ছে । এ ছাড়া তিস্তা নদীতে পানি বাড়া-কমায় ভাঙনের মুখে পরেছে উপজেলার নদী তীরর্বতী বিভিন্ন এলাকা।
পাউবোর বন্যার র্পূবাভাস ও সর্তকীকরণ কেন্দ্র জানিয়েছে, সোমবার বেলা ৩টায় থেকে তিস্তা নদীর কাউনিয়া পয়েন্টে বিপদসীমার ৫ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে পানি প্রবাহিত হচ্ছে। এর আগে বেলা ১২ টায় বিপদসীমার ৭ সেন্টিমিটার এবং সকাল ৯ টায় ৫ সেন্টিমিটার ও ৬ টায় ২ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে পানি প্রবাহ রের্কড করা হয়েছে। কাউনিয়া পয়েন্টে বিপদসীমা ২৮ দশমিক ৭৫ সেন্টিমিটার ধরা হয়।
অন্যদিকে ডালিয়া ব্যারাজের পয়েন্টে সোমবার বেলা ৩ টায় পানি প্রবাহ রের্কড করা হয় ৫১ দশমিক ৭২ সেন্টিমিটার, যা বিপ সীমার ৪৫ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এর আগে বেলা ১২ টায় ৫১ দশমিক ৭২ সেন্টিমিটার, সকাল ৯টায় ৫১ দশমিক ৭৪ সেন্টিমিটার এবং সকাল ৬টায় বিপদসীমার ৫১ দশমিক ৮০ সেন্টিমিটার পানি প্রবাহ রের্কড করা হয়। এ পয়েন্টে ৫২ দশমিক ১৫ সেন্টিমিটার ধরা হয়।
এদিকে পানি বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে কাউনিয়া উপজেলার নদী তীরর্র্বতী নিম্নাঞ্চলে ডুবে গেছে বাদাম সহ বিভিন্ন ফসলী জমি। তিস্তা নদীতে পানি বাড়া-কমায়
ভাঙনের মুখে পরেছে বিভিন্ন এলাকা। পাউবো জোড়ালো প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা না নেওয়ায় ভাঙনকবলিত পরিবারের অনেকে নিরুপায় হয়ে বসতঘর সরিয়ে নিচ্ছে। ভাঙন রোধে জোড়ালো ব্যবস্থা নেওয়া না হলে তারা ভুমিহীন হয়ে পড়বে বলে জানিয়েছেন ভুক্তভোগী পরিবারগুলো।
উপজেলার বালাপাড়া ইউনিয়নের গদাই ও পাঞ্জরভাঙ্গা গ্রামের কয়েক শতাধিক বসতভিটা ভাঙনের হুমকিতে রয়েছে। গদাই গ্রামের হাফেজ আলী বলেন, গত বছর থেকে নদী ভাঙ্গছে। কিন্তু ভাঙ্গণ রোধে জোড়ালো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। এ বছর প্রায় ২০০ বিঘা আবাদি জমি নদী র্গভে বিলিন হয়ে গেছে। তার বসতভিটাও নদীর একেবারে কিনারায়। কখন যে ভেঙ্গে যায়।
তিস্তার ভাঙনের শিকার হওয়া মোজাম্মেল জানান, নদীর তীরর্বতী এলাকার ঘরে ঘরে তিস্তার ভাঙনের আতঙ্ক। তাঁর প্রশ্ন– এবার ঘরবাড়ি সরিয়ে যাবেনইবা কোথায়? তাঁদের আবাদী জমি সব নদীত চলে গেছে। অবস্থাপন্ন গৃহস্থ থেকে তাঁদের এখন পথের ফকির হয়ে যাওয়ার অবস্থা হয়েছে। ভাঙনের চিন্তায় রাতে চোখে ঘুম আসে না। বাড়ি সরানোর জন্য প্রস্তুত থাকতে হয়।
তিস্তা বাঁচাও, নদী বাঁচাও সংগ্রাম পরিষদের সভাপতি অধ্যক্ষ নজরুল ইসলাম হক্কানি বলেন, অসময়ের তিস্তার ভাঙনে প্রতিবছর এক লাখ কোটি টাকার সম্পদ নদী র্গভে চলে যায়। তিস্তা খনন, সংরক্ষণ ও মহাপরিকল্পনার বাস্তবায়ন করা ছাড়া এই সমস্যার স্থায়ী সমাধানের জন্য বিকল্প নেই।
কাউনিয়া উপজেলা র্নিবাহী র্কমর্কতা (ইউএনও) মহিদুল হক বলেন, তিস্তা নদীর বৃদ্ধি ও ভাঙনের বিষয়ে আমরা র্সাবক্ষণিক খোঁজখবর রাখছি। কোথাও কোনো সমস্যা হলে তা ক্ষণিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এখন র্পযন্ত বন্যার আভাস পাওয়া যায়নি। তারপরও সরকারিভাবে সব ধরনের আগাম প্রস্তুতি নেওয়া আছে, যাতে কেউ ক্ষতিগ্রস্থ না হয়। স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের সঙ্গে র্সাবক্ষণিক নদীপাড়ের পরিস্থিতির খোঁজখবর রাখা হচ্ছে।
রংপুর পানি উন্নয়ন র্বোডের (পাউবো) র্নিবাহী প্রকৌশলী রবিউল ইসলাম বলেন, উজানে ভারী বৃষ্টিপাত পাহাড়ি ঢলের কারণে ডালিয়া ব্যারাজের পয়েন্টে তিস্তার পানি বাড়তে শুরু করেছে। পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে ডালিয়া ব্যারাজের সব গেট খুলে রাখা হয়েছে। গত কয়েক দিনের তুলনায় সোমবার সকাল থেকে কাউনিয়া পয়েন্টে তিস্তার পানি বাড়তে শুরু করেছে। এছাড়া কাউনিয়ায় তিস্তার ভাঙ্গন রোধে জিও ব্যাগ ফেলা হচ্ছে।