
সুনামগঞ্জে দ্বিতীয়বারের মতো বন্যা পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে। বিপৎসীমার ৩২ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে সুরমা নদীর পানি। সেই সঙ্গে বৃষ্টি ও উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলের পানিতে তলিয়ে গেছে তাহিরপুর, দোয়ারাবাজার ও ছাতক উপজেলার গ্রামীণ সড়ক, ঘরবাড়ি ও ফসিল জমি।এতে পানিবন্দি হয়ে ভোগান্তিতে পড়েছেন লক্ষাধিক মানুষ।
মঙ্গলবার (২ জুলাই) সকাল ৬টায় সুরমা নদীর পানি সুনামগঞ্জ শহরের ষোলঘর পয়েন্টে বিপৎসীমার ৩২ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়।
এক মাসের ব্যবধানে দুইবার সুনামগঞ্জ বন্যা কবলিত হওয়ায় চরম ভোগান্তিতে পড়েছেন এই অঞ্চলের মানুষেরা। জেলার ২০০টি আশ্রয়কেন্দ্রে সাড়ে ৯শ মানুষ আশ্রয় নিয়েছেন।
ঢলের পানিতে প্লাবিত হয়েছে তাহিরপুর, বিশ্বম্ভরপুর, জামালগঞ্জ, মধ্যনগর, ধর্মাপাশাসহ বিভিন্ন উপজেলার নিম্নাঞ্চল। ডুবেছে হাট-বাজার ও গ্রামীণ সড়ক। জেলা শহরের সাথে তাহিরপুর ও জামালগঞ্জ উপজেলার সরাসরি সড়ক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। পাহাড়ি ঢলে ডুবছে ঘর-বাড়ি, হাটবাজার, রাস্তা-ঘাট। এতে আবারো বন্যার দুর্ভোগে পড়েছে সুনামগঞ্জবাসী।
এদিকে, সুনামগঞ্জ জেলা শহর ও শহরতলীর আশপাশ এলাকার বন্যার পানি আবারো বাড়ছে। গত শুক্রবার থেকে ভারতের মেঘালয়ে ভারি বৃষ্টি শুরু হওয়ায় এমন উদ্ভূত পরিস্থিতিতে জুলাই মাসের প্রথম দিকে সিলেট- সুনামগঞ্জ জেলার সুরমা, কুশিয়ারা, কালনী নদী সহ বিভিন্ন নদীর পানি বেড়ে বন্যা পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে।
যাদুকাটা নদী দিয়ে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলের পানিতে ডুবে গেছে তাহিরপুর-বাদাঘাট সড়ক, জেলার বিশ্বম্ভরপুর উপজেলার শক্তিয়ার খলা-কৈয়ারকান্দা সড়ক। এছাড়া তাহিরপুর উপজেলার আনোয়ারপুর সড়ক পানিতে ডুবে যাওয়ায় ও শক্তিয়ার খলায় সড়ক ভেঙে যাওয়ায় সুনামগঞ্জ জেলার শহরে যাতায়াতে দুর্ভোগে পড়েছেন বিশ্বম্ভরপুর, তাহিরপুর, মধ্যনগর ও ধর্মপাশা উপজেলার চলাচলকারীরা। বিশ্বম্ভরপুর উপজেলার বাঘমারা থেকে তাহিরপুরের আনোয়ারপুর পর্যন্ত নৌকা দিয়ে চলাচল করতে হচ্ছে। সাচনাবাজার সুনামগঞ্জ সড়কের নিয়ামতপুর-ইচ্চার চরের মাঝখানে নতুন ব্রিজের ডাইভারসনে হাঁটু ও উরু পানিতে চলছে ছোট নৌকা।
সুনামগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মামুন হাওলাদার বলেন, সুনামগঞ্জে ও ভারতের চেরাপুঞ্জিতে বৃষ্টি হওয়ার কারণে সুরমা ও যাদুকাটা নদীর পানি বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। আরও একদিন মাঝারি ও ভারী বৃষ্টিপাত হতে পারে। এতে নদীর পানি বেড়ে স্বল্পমেয়াদি বন্যা পরিস্থিতি সৃষ্টি হতে পারে।
এদিকে, বন্যাকবলিত সিলেট বিভাগের চার জেলায় এইচএসসি পরীক্ষা পেছালেও স্বস্তিতে নেই পরীক্ষার্থীরা। বন্যায় বিধ্বস্ত হয়ে পড়েছে ঘরবাড়ি ও রাস্তাঘাট। পরীক্ষা কেন্দ্রে এখনও পানি থাকায় পরীক্ষায় অংশ নেওয়া ও ভাল ফল করা বড় চ্যালেঞ্জ হিসেবে দেখছেন অভিভাবকেরা।
সারা দেশে গত ৩০ জুন থেকে এইচএসসি পরীক্ষা শুরু হলেও, সিলেট বিভাগের চার জেলার ৮৩ হাজার শিক্ষার্থী বসতে পারেনি পরীক্ষায়। ঘরে-বাইরে, পরীক্ষা কেন্দ্রে পানি থাকায় প্রথম চারটি পরীক্ষা স্থগিত করে শিক্ষাবোর্ড। এখনও অনেকের ঘরবাড়ি ও পরীক্ষা কেন্দ্রে রয়েছে পানি। এ অবস্থার মধ্যেই ৯ জুলাই পরীক্ষায় বসবে শিক্ষার্থীরা।