প্রতিদিন চট্টগ্রাম জেলার বিভিন্ন প্রান্ত থেকে হাজার হাজার বিচারপ্রার্থী মানুষ তাদের মামলা- মোকদ্দমার প্রয়োজনে আদালত ভবনে আসেন। বিচারিক কাজের প্রয়োজনে সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত তাদেরকে আদালত ভবনে অবস্থান করতে হয়।
কিন্তু আদালত ভবনে পয়োজনীয় বিশ্রামাগার না থাকায় তাদের সীমাহীন দুর্ভোগ পোহাতে হয়। বিশেষ করে বয়স্ক, নারী ও শিশু বিচারপ্রার্থীদের আদালত ভবনে উপযুক্ত পরিবেশ না থাকায় অবর্ণনীয় কষ্ট সহ্য করতে হয়। আদালত ভবনে আসা জনগণের কষ্ট লাঘবের জন্য কর্তৃপক্ষ মাঝে মধ্যে উদ্যোগ গ্রহণ করলেও তা ছিল অপ্রতুল।
সম্প্রতি বাংলাদেশ সুপ্রীম কোর্টের উদ্যোগে সারা দেশের অন্যান্য জেলার ন্যায় চট্টগ্রাম আদালত ভবণ প্রাঙ্গনে স্থাপিত হয়েছে বিচারপ্রার্থী মানুষের বিশ্রামাগার ন্যায়কুঞ্জ নামক ভবন। গণপতূ বিভাগেরর্ তত্ত্বাবধানে আধুনিক সুযোগ-সুবিধা সম্বলিত ন্যায়কুঞ্জ ভবন নির্মাণ শেষে গত বছরের ২৫ অক্টোবরে সদ্য সাবেক প্রধান বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী ভার্চয়ালি ন্যায়কুঞ্জ উদ্বোধন করেন এবং তা বিচারপ্রার্থী মানুষের ব্যবহারের জন্য উম্মুক্ত করে দেয়া হয়।
চট্টগ্রাম জেলা জজ আদালতের নাজির এনামুল হক আকন্দ (বাহার) বলেন, জাজ-ইন-চার্জ নেজারত এর সার্বিক তত্ত্বাবধানে ন্যায়কুঞ্জের সার্বিক বিষয়াবলি দেখভাল করা হয় এবং প্রতিদিন পরিস্কার পরিচ্ছন্ন পরিবেশে যাতে বিচারপ্রার্থীরা ন্যায়কুঞ্জ ব্যবহার করতে পারেন সে বিষয়ে সজাগ দৃষ্টি রাখা হয়।
দুই হাজার বর্গফুট আয়তনের ন্যায়কুঞ্জ ভবনে বিচারপ্রার্থী মানুষের বসার সু-ব্যবস্থা, পুরুষ ও মহিলাদের জন্য পৃথক টয়লেট, মাতৃদুগ্ধপান কর্ণার ও একটি ক্যাফেটেরিয়া রয়েছে। আদালত প্রাঙ্গনে আগত বিভিন্ন শ্রেণি পেশার মানুষ সহজেই ন্যায়কুঞ্জ ব্যবহারের সুযোগ লাভ করায় সন্তোষ প্রকাশ করেন।
ফটিকছড়ি থেকে আগত একটি পারিবারিক মামলার বাদী আকলিমা বেগম বলেন, মামলার প্রতি ধার্য্য তারিখ তিনি তার দুগ্ধ্যপোষ্য শিশুকে নিয়ে আদালতে আসেন।
কিন্তু শিশুকে দুধ পান করানোর কোন নির্ধারিত স্থান না থাকায় এবং টয়লেট ব্যবহারের কোন সুবিধা না থাকায় তাকে অনেক বিড়ম্বনার শিকার হতে হয়েছে। বর্তমানে ন্যায়কুঞ্জ চালু হওয়ায় তিনি উক্ত বিড়ম্বনা থেকে পরিত্রাণ লাভ করেছেন মর্মে জানান।
ষাটোর্ধ ইউছুফ আলী জানান, ২০১২ সাল থেকে তিনি মামলার কাজে নিয়মতি আদালত প্রাঙ্গণে আসছেন।
কিন্তু আদালত প্রাঙ্গণে বিশ্রামাগার ও পরিচ্ছন্ন টয়লেটের সু-ব্যবস্থা না থাকায় তার মত বয়স্ক লোকজনের অনেকের দুর্ভোগ পোহাতে হত। ন্যায়কুঞ্জ স্থাপিত হওয়ায় তাদের সে দুর্ভোগ কিছুটা লাঘব হয়েছে।
ন্যায়কুঞ্জ ভবনের ভেতরে গিয়ে দেখা যায় যে, সাধারণ বিচারপ্রার্থী সহ বেশ কয়েকজন আইনজীবী ন্যায়কুঞ্জের ক্যাফেটেরিয়ায় খাবার খাচ্ছেন এবং মামলার বিষয় নিয়ে আলাপ আলোচনা করছেন। একজন আইনজীবী এই প্রতিবেদককে বলেন যে, ন্যায়কুঞ্জ সত্যিকার অর্থে বিচারপ্রার্থীর বিশ্রামের জন্য ভরসার স্থান হয়ে উঠছে।
তিনি আরো জানান যে চট্টগ্রামের মত বিভাগীয় শহর যেখানে প্রতিদিন হাজার হাজার মানুষ সেবাপ্রার্থী হিসাবে আদালত ভবনে আসেন সেখানে ন্যায়কুঞ্জের পরিসর আরো বাড়ানো হলে ন্যায়কুঞ্জ স্থাপনের উদ্দেশ্য অর্জিত হবে।