দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে আজ রোববার (৭ জানুয়ারি)। ভোটগ্রহণ চলবে সকাল ৮টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত। ২৯৯টি আসনে এবার মোট ১১ কোটি ৯৬ লাখ ৯১ হাজার ৬৩৩ জন ভোটার তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করবেন।গত ১৫ নভেম্বর দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার।
সে অনুযায়ী ১৮ ডিসেম্বর প্রতীক বরাদ্দের পর প্রার্থীরা প্রচার-প্রচারণা শুরু করেন, যা শুক্রবার (৫ জানুয়ারি) সকাল ৮টায় শেষ হয়েছে। সকাল থেকে শুরু হচ্ছে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ভোটগ্রহণ।
বিএনপি-জামায়াতসহ সমমনা দলগুলো এ নির্বাচন বর্জন করেছে, অংশ নিয়েছে ২৮টি নিবন্ধিত রাজনৈতিক দল। এদিকে নির্বাচন কমিশনের পক্ষ থেকে একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য ভোট করার কথা বারবার বলা হচ্ছে। এ লক্ষ্যে তারা সব ধরনের প্রস্তুতিও শেষ করেছে।
২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বরে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। এ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ ২৫৭টি আসন লাভ করে বিজয় অর্জন করে। ভোটদানের হার ৮০.২%।
তবে এবারের সংসদ নির্বাচনে আশানুরূপ ভোটার উপস্থিতি নিশ্চিতের জন্য ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সর্বোচ্চ চেষ্টা করছে। অন্যদিকে নির্বাচনে অংশ না নেওয়া বিএনপি ভোটার ভোট না দিতে সর্বাত্মক চেষ্টা করছে। ফলে রোববারের নির্বাচনে ভোটার উপস্থিতি কেমন হয় তা নিয়ে সংশয় থেকেই যাচ্ছে। ফলাফল ঘোষণার পরই জানা যাবে ভোট প্রদানের প্রকৃত হার।
এক প্রার্থীর মৃত্যু হওয়ায় ৩০০ আসনের মধ্যে রোববার ভোট হবে ২৯৯ আসনে। স্বতন্ত্র প্রার্থীর মৃত্যুর কারণে নওগাঁ-২ আসনে পরে ভোটগ্রহণ করবে ইসি। এবারের নির্বাচনে মোট ভোটার ১১ কোটি ৯৬ লাখ ৯১ হাজার ৬৩৩ জন। এর মধ্যে ৬ কোটি ৭ লাখ ৭১ হাজার ৫৭৯ জন পুরুষ আর ৫ কোটি ৮৯ লাখ ১৯ হাজার ২০২ জন নারী। এ ছাড়া তৃতীয় লিঙ্গের ভোটারের সংখ্যা ৮৫২।
৪২ হাজার ১০৩টি কেন্দ্রে ভোটকক্ষ থাকবে ২ লাখ ৬১ হাজার ৯১২টি। এবার সব আসনেই সনাতন পদ্ধতিতে ব্যালট পেপার ব্যবহার করে ভোটগ্রহণ করা হবে।
ভোট গণনার কাজ শেষ হওয়ার পর পরই প্রত্যেক প্রিজাইডিং অফিসার ব্যবহৃত ব্যালট পেপার ভর্তি সিলমোহরকৃত বিভিন্ন ধরনের প্যাকেট, ভোট গণনার বিবরণী ও ব্যালট পেপারের হিসাব সরাসরি অথবা সহকারী রিটার্নিং অফিসারের মাধ্যমে রিটার্নিং অফিসারের কাছে পাঠাবেন। তিনি প্রিজাইডিং অফিসারদের কাছ থেকে প্রাপ্ত ফলাফল যোগ করে প্রত্যেক প্রার্থীর ফলাফল নির্ধারণ করবেন।
এবার নির্বাচনী লড়াইয়ে রয়েছেন ১৯৭০ জন প্রার্থী। তাদের মধ্যে ১ হাজার ৫৩৪ জন দেশের ২৮টি রাজনৈতিক দলের মনোনীত প্রার্থী, বাকি ৪৩৬ জন স্বতন্ত্র।
দল অনুযায়ী প্রার্থী : এবারের নির্বাচনে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের প্রার্থীর সংখ্যা ২৬৬ জন। এ ছাড়া জাতীয় পাটির ২৬৫ জন, তৃণমূল বিএনপির ১৩৫ জন, ন্যাশনাল পিপলস পার্টির ১২২ জন, বাংলাদেশ কংগ্রেসের ৯৬ জন, বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী আন্দোলনের ৫৬ জন জন।
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন উপলক্ষে ৭২ ঘণ্টা মোটরসাইকেল ও ২৪ ঘণ্টা সর্বসাধারণের যান চলাচলের বিষয়ে নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে। এসময় কেবল আইনশৃঙ্খলা বাহিনী, সশস্ত্র বাহিনী, প্রশাসনের সদস্য ও অনুমোদিত পর্যবেক্ষক, জরুরি সেবার যানবাহন, ওষুধ, চিকিৎসা সরঞ্জাম ও অভিন্ন কাজে ব্যবহৃত জিনিসপত্র এবং সংবাদপত্র বহনকারী সব ধরনের যানবাহন, দূরপাল্লার যানবাহন, প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী ও তাদের এজেন্টদের ক্ষেত্রে এই বিধিনিষেধ শিথিল করা হবে। সাংবাদিক, পর্যবেক্ষক, নির্বাচন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা-কর্মচারী, জাতীয় মহাসড়ক, প্রধান আন্তঃজেলা রুট, মহাসড়ক এবং প্রধান মহাসড়কের সংযোগ সড়কের ক্ষেত্রেও বিধিনিষেধ শিথিল করা হবে।
দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন দেখার জন্য ১৮৬ জন পর্যবেক্ষক ও সাংবাদিককে অনুমোদন দিয়েছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। তাদের মধ্যে ১২৭ জন পর্যবেক্ষক আর ৫৯ জন বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমের কর্মী। এ ছাড়া নির্বাচন পর্যবেক্ষণে দেশি ২০ হাজার ৭৭৩ জন পর্যবেক্ষককে অনুমোদন দিয়েছে ইসি। তাদের মধ্যে কেন্দ্রীয়ভাবে ৪০টি পর্যবেক্ষক সংস্থার ৫১৭ জন এবং স্থানীয়ভাবে ৮৪টি পর্যবেক্ষণ সংস্থার ২০২৫৬ জন ভোট পর্যবেক্ষণ করবে।
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ব্যয় হচ্ছে প্রায় ২৩০০ কোটি টাকা। এ নির্বাচনে আসনপ্রতি সাত কোটি টাকার বেশি ব্যয় করবে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। এ ব্যয়ের তিন ভাগের দুই ভাগ রাখা হয়েছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষার জন্য।