(পরীক্ষামূলক সম্প্রচার)

আজ: মঙ্গলবার, ১১ই ফেব্রুয়ারি, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ ২৮শে মাঘ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ ১২ই শাবান, ১৪৪৬ হিজরি

নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে ঐতিহাসিক জয় বাংলাদেশের

ওয়ানডেতে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে বাংলাদেশের পরিসংখ্যানটা পোশাকের মতোই রঙিন। বিপরীতে টেস্টে সেটি ধূসর সাদা! এর আগে কিউইদের সঙ্গে ১৭ টেস্টে টাইগাররা মাত্র একটিতে জিতেছিল। তাও আবার সেটি তাদের মাঠ মাউন্ট মঙ্গানুইয়ে। দেশের মাটিতে নিউজিল্যান্ডকে একাধিকবার ওয়ানডেতে ধবলধোলাইয়ের অভিজ্ঞতা ছিল বাংলাদেশের। টেস্টেও তেমনটা আশা করা কঠিন, শান্ত-তাইজুলরা অন্তত খরা ঘুচিয়ে ঘরের মাঠে ইতিহাসের প্রথম জয় তুলে নিয়েছে। টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের নতুন চক্রের শুরুতেই সাবেক বিশ্বচ্যাম্পিয়ন কিউইদের ১৫০ রানে হারিয়েছে বাংলাদেশ।

জয়ের দৃশ্যপটটা বাংলাদেশ চতুর্থ দিনেই তৈরি করে রেখেছিল। যদিও ম্যাচের আগে অনিশ্চয়তা ছিল পঞ্চম দিন পর্যন্ত খেলা গড়াবে কি না। দুই ইনিংসেই কিউইদের পরীক্ষায় নিয়েছেন তাইজুল ইসলাম। স্পিনবান্ধব হয়ে পড়া উইকেটে চতুর্থ দিন তার ঘূর্ণিতে ১১৩ রানেই ৭ উইকেট হারিয়ে ফেলে সফরকারীরা। আজ (শনিবার) প্রথম টেস্টের শেষ দিনে নেমেই ব্যক্তিগত ফিফটি তুলে নেন আগেরদিন ৪৪ রানে অপরাজিত থাকা ড্যারিল মিচেল। অবশ্য এরপর তিনি আর চোখ রাঙাতে পারেননি সেভাবে।

মিচেলের বিদায়ের পর বাংলাদেশের জয়ের অপেক্ষা বাড়িয়েছেন কিউই অধিনায়ক টিম সাউদি। তবে সেই দৌড় তাদের বেশিদূর নিয়ে যেতে পারেনি। ব্যক্তিগত ফাইফারে (৫ উইকেট) তাইজুল কিউইদের গুড়িয়ে দিয়েছেন ১৮১ রানে। দ্বিতীয় ইনিংসে তাদের হয়ে সর্বোচ্চ ৫৮ রান করেছেন মিচেল। বাংলাদেশের হয়ে তাইজুলের ৬টি ছাড়াও নাঈম হাসান ২টি, মেহেদি মিরাজ ও শরিফুল একটি করে শিকার ধরেন।

এর আগে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে এক জয়ের বিপরীতে বাংলাদেশ হেরেছিল ১৩ টেস্টে। ৩টি টেস্ট ড্র হয়েছিল। সিলেটের এই টেস্টে জিততে হলে ইতিহাসই গড়তে হতো কিউইদের। নিজেদের ইতিহাসে তাদের সর্বোচ্চ রান তাড়া করে জেতার রেকর্ড পাকিস্তানের বিপক্ষে, ক্রাইস্টচার্চে। ৩২৪ রান তাড়া করে তারা ১৯৯৪ সালে জিতেছিল। এই ম্যাচে তাদের সামনে বাংলাদেশের দেওয়া লক্ষ্য ছিল ৩৩২ রানের।

চতুর্থ দিন শেষে ৭ উইকেট হারালেও সফরকারী স্পিনার এজাজ প্যাটেল লড়াইয়ের আভাস দিয়েছিলেন। লড়াই হলেও, তাদের জয়ের স্বপ্ন দেখা ছিল অসম্ভবকে সম্ভব করার মতো। তবে তার দাবি অমূলকও নয়, ক্রিজে ছিলেন স্বীকৃত ব্যাটার মিচেল। শেষদিনে দ্রুত কিউই ইনিংস থামাতে তার উইকেটই সবার আগে প্রয়োজন ছিল বাংলাদেশের। মিচেল দিনের খেলা শুরুর ১০ম ওভারেই সুইপ করতে গিয়ে ক্যাচ দেন। নাঈম হাসানের বলটি উড়িয়ে মারতে গিয়ে স্কয়ার লেগে তাইজুলের হাতে বন্দি তিনি। এর আগে মিচেল ১২০ বলে ৫৮ রানে করেন। ইশ সোধির সঙ্গে ৯১ বলে ৩০ রানের জুটি গড়েছিলেন মিচেল।

ব্যক্তিগত ফিফটি পূরণের পথে মিচেলের একটি শট
ততক্ষণে হার প্রায় নিশ্চিত কিউইদের, ফলে শেষ চেষ্টা হিসেবে ব্যবধানটা কমিয়ে আনতে আক্রমণাত্মক খেলার মানসিকতা নিয়ে নামেন কিউই অধিনায়ক। সাউদির আগে নিউজিল্যান্ডের দ্বিতীয় ইনিংসে কেউ ছক্কা মারেননি। শেষ পর্যন্ত ২ ছক্বা ও ১ চারে ২৪ বলে ৩৪ রানে ফিরেন তিনি। তাকে ফিরিয়ে টেস্টে ১২তম বারের মতো এক ইনিংসে ৫ উইকেট পূর্ণ করেন তাইজুল।

এরপর শেষ উইকেটটা ভাঙেন বাংলাদেশের এই অভিজ্ঞ বাঁ-হাতি স্পিনার। তার বলে সিলি পয়েন্টে দাঁড়ানো জাকির হাসানকে ক্যাচ তুলে দেন সোধি (৯১ বলে ২২)। ৩১ বছর বয়সী তাইজুল নিউজিল্যান্ডের প্রথম ইনিংসে ১০৯ রানে ৪ উইকেট নিয়েছিলেন। এবার দ্বিতীয় ইনিংসে ৭৫ রানে নিলেন ৬ উইকেট।

এর আগে ভারত বিশ্বকাপে ভরাডুবির পর ঘরের মাঠে ঘুরে দাঁড়ানোর চ্যালেঞ্জ ছিল বাংলাদেশের। আইসিসি টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের নতুন চক্রের শুরুতেই প্রতিপক্ষ শক্তিমত্তা-পরিসংখ্যানে এগিয়ে থাকা নিউজিল্যান্ড। অভিজ্ঞ কেইন উইলিয়ামসন, ডেভন কনওয়ে কিংবা ড্যারিল মিচেল-কে নেই সফরকারীদের দলে। অন্যদিকে, ঠিক বিপরীত চিত্র বাংলাদেশের। অভিজ্ঞ তিন ক্রিকেটার তামিম ইকবাল, লিটন দাস ও অধিনায়ক সাকিবকে ছাড়াই সিলেটে খেলতে নামে লাল-সবুজের দল। সাকিবের অনুপস্থিতিতে অধিনায়কের নেতৃত্বভার ওঠে শান্তর কাঁধে। তরুণ নেতৃত্ব ও দল নিয়েই টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের নতুন চক্রে দারুণ শুরুর পথে স্বাগতিকরা।

সিলেট টেস্টের প্রথম ইনিংসে বাংলাদেশের ৩১০ রানের জবাবে ব্যাট করতে নেমে কেইন উইলিয়ামসনের লড়াকু সেঞ্চুরিতে ভর করে তাদের সংগ্রহ ছিল ৩১৭। ৭ রানে পিছিয়ে থেকে দ্বিতীয় ইনিংসে ব্যাট করতে নেমে দারুণ জবাব দেয় বাংলাদেশ। নিজেদের দ্বিতীয় ইনিংসের ব্যাটিং শেষে আজ কিউইদের সামনে ৩৩২ রানের পাহাড়সম টার্গেট ছুড়ে দেয় বাংলাদেশ। দলের পক্ষে অধিনায়ক নাজমুল হোসেন শান্ত ১০৪, মুশফিকুর রহিম ৬৭ ও মেহেদি হাসান মিরাজ অপরাজিত ৫০ রান করেন। নিউজিল্যান্ডের স্পিনার এজাজ প্যাটেল সর্বোচ্চ ৪ উইকেট নেন।

এর আগে এতবড় রান তাড়া করে জয়ের নজির নেই নিউজিল্যান্ডের। বড় লক্ষ্য তাড়ায় এদিন শুরুতেই হোঁচট খায় কিউইরা। ইনিংসের প্রথম ওভারেই বাংলাদেশকে দারুণ শুরু এনে দেন শরিফুল ইসলাম। এই বাঁ-হাতি পেসারের খাটো লেন্থের বলে খোঁচা দিয়ে উইকেটের পেছনে ধরা পড়েন টম লাথাম। ডাক খেয়ে এই ওপেনার সাজঘরে ফেরায় রানের খাতা খোলার আগেই উইকেট হারায় সফরকারীরা। লাথাম ফেরার পর কনওয়েকে সঙ্গে নিয়ে ইনিংস মেরামতের চেষ্টায় ছিলেন সাবেক অধিনায়ক কেইন উইলিয়ামসন। প্রথম ইনিংসের সেঞ্চুরিয়ান এ যাত্রায় ব্যর্থ হন। তাইজুলের ঘূর্ণিতে পরাস্ত হন তিনি! লেগ বিফোরের ফাঁদে পড়ার আগে ২৪ বলে করেছেন ১১ রান। এরপর তাইজুলকে অনুসরণ করলেন মেহেদী মিরাজও।

থিতু হওয়ার আগেই হেনরি নিকোলসকে বিদায় করেন এই অলরাউন্ডার। ১৩তম ওভারের চতুর্থ বলে মিরাজকে সুইপ করতে গিয়ে ঠিকমতো টাইমিং করতে পারেননি নিকোলস। টপ এজ হয়ে বল ওঠে সোজা আকাশে। শর্ট ফাইন লেগ থেকে কয়েক পা সরে বল তালুবন্দি করেন নাঈম। ২ রান করে নিকোলস ফেরায় ৩০ রান তুলতেই টপ অর্ডারের তিন ব্যাটারকে হারিয়ে বিপাকে পড়ে যায় নিউজিল্যান্ড।

এরপর মিচেলকে সঙ্গে নিয়ে জুটি গড়ার চেষ্টায় ছিলেন কনওয়ে। চা বিরতি থেকে ফিরেই এই জুটি ভাঙেন তাইজুল। এই বাঁহাতি স্পিনারের টার্ন করে বেরিয়ে যাওয়া বল ডিফেন্স করতে গিয়ে সিলি পয়েন্টে ক্যাচ দিয়েছেন কনওয়ে। ২২ রান করে এই ওপেনার ফেরায় দলীয় ফিফটির আগেই সাজঘরে ফেরে সফরকারীদের চার ব্যাটার। এভাবে চতুর্থ দিন শেষ হওয়ার আগে একশ রান তুলতেই ৭ উইকেট হারায় সাউদির দল।

Share on facebook
Facebook
Share on twitter
Twitter
Share on linkedin
LinkedIn
Share on whatsapp
WhatsApp
Share on email
Email