(পরীক্ষামূলক সম্প্রচার)

আজ: সোমবার, ১৪ই অক্টোবর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ ২৯শে আশ্বিন, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ ১১ই রবিউস সানি, ১৪৪৬ হিজরি

বঙ্গমাতা পাশে থাকাতেই জাতির পিতার সাফল্য সহজ হয়েছে : প্রধানমন্ত্রী

ডেস্ক রিপোর্ট: প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, সহধর্মিণী ও মহীয়সী নারী বঙ্গমাতা সব সময় পাশে ছিলেন বলে জাতির পিতার সাফল্য লাভ সহজ হয়েছে। তিনি বলেন, শুধু ছাত্রজীবন নয়, রাজনৈতিক জীবনেও তিনি সব সময় তাঁর বাবার ছায়াসঙ্গী হিসেবে ছিলেন।
শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমার বাবার সাফল্য যদি আপনারা দেখেন, সেই ছাত্র জীবন থেকে ‘মা’ পাশে থাকাতে তাঁর জীবন কিন্তু সাফল্যের সিঁড়ি বেয়ে ওঠে।’

আজ মঙ্গলবার সকালে রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে বঙ্গমাতা বেগম ফজিলাতুন নেছা মুজিব এর ৯৩তম জন্মবার্ষিকী উদযাপন এবং বঙ্গমাতা বেগম ফজিলাতুন নেছা মুজিব পদক-২০২৩ প্রদান অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির ভাষণে প্রধানমন্ত্রী এসব কথা বলেন।
তিনি বলেন, বঙ্গমাতা শুধু নিজের সংসারই চালাতেন না, হাতে যা টাকা-পয়সা আসত তা-ও বাবার রাজনীতির জন্য তাঁকে দিয়ে দিতেন। জাতির পিতার ‘অসমাপ্ত আত্মজীবনী’ থেকে উদ্ধৃত করে প্রধানমন্ত্রী কথা জানান, ‘আব্বা-আম্মা ছাড়াও সব সময় রেণু (বঙ্গমাতা) আমাকে কিছু টাকা-পয়সা দিয়েছে। রেণু যা কিছু জোগাড় করতো বাড়ি গেলে এবং দরকার হলেই আমাকে দিত, কোনদিন আপত্তি করেনি। নিজে মোটেই খরচ করতো না, গ্রামের বাড়িতে থাকত। আমার জন্য সব রাখত।’

‘এই ভাবে তিনি আমার বাবার পাশে থেকে তাঁকে সবরকমের সহযোগিতা দিয়েছেন,’ উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, তার বাবা যখন বি এ পরীক্ষা দেন কলকাতায় তখন দাঙ্গা হচ্ছিল। তাঁর বাবা দাঙ্গা দমনে ঝাঁপিয়ে পড়েন, কিন্তু সে সময় তাঁর ‘মা’ চলে আসেন তাঁর বাবার লেখাপড়ার সহযোগিতা করার জন্য।

তাঁর অনেক আত্মীয়রাই সে সময়ে কলকাতায় থাকতেন উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন তাঁর মা’র ধারণা হয়েছিল, তিনি যদি তাঁর বাবার পাশে থাকেন বাবা লেখাপড়া করবেন এবং পাস করবেন, যা করেছিলেনও তিনি। এটাও জাতির পিতা তাঁর ‘অসমাপ্ত আত্মজীবনী’তে লিখে গেছেন।
সরকারপ্রধান বলেন, আমার বাবার সাফল্য যদি আপনারা দেখেন সেই ছাত্র জীবন থেকে ‘মা’ পাশে থাকাতে তাঁর জীবন কিন্তু সাফল্যের সিঁড়ি বেয়ে ওঠে। শুধু ছাত্রজীবন থেকে নয় রাজনৈতিক জীবনে তিনি সব সময় আমার বাবার পাশে ছিলেন।

বঙ্গমাতা জাতির পিতাকে বলতেন, ‘রাজনীতি করো আমার আপত্তি নেই, কিন্তু পড়াশোনা করতে হবে,’ উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, তাঁর দাদাও বলেছিলেন ‘যে কাজই করো তোমাকে পড়াশোনা করতে হবে।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, তাঁর বাবা টানা দুই বছর কখনো জেলের বাইরে না থাকলেও তাঁর মা সব সময় ঘর-সংসার সামাল দিতেন এবং কখনো হতাশ হননি।
প্রধানমন্ত্রী ঐতিহাসিক ৬ দফা, আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা এবং জাতির পিতার ৭ মার্চের ঐতিহাসিক ভাষণ প্রদানসহ জাতির বিভিন্ন সন্ধিক্ষণে বঙ্গমাতার ঐতিহাসিক সময়োচিত পদক্ষেপের মাধ্যমে দেশের স্বাধীনতা লাভের বিভিন্ন প্রেক্ষাপট তাঁর ভাষণে তুলে ধরেন।
শেখ হাসিনা এদিন অনুষ্ঠানে নিজ নিজ ক্ষেত্রে অসামান্য অবদানের স্বীকৃতি স্বরুপ চার বিশিষ্ট নারী ও জাতীয় নারী ফুটবল দলের মধ্যে ‘বঙ্গমাতা বেগম ফজিলাতুন নেছা মুজিব পদক-২০২৩’ প্রদান করেন।
বঙ্গমাতা বেগম ফজিলাতুন নেছা মুজিবের অবদানকে স্মরণীয় করে রাখার জন্য আটটি ক্ষেত্রে নারীদের অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ প্রতি বছর সর্বোচ্চ পাঁচজন নারীকে এই পুরস্কার দেওয়া হয়।

এর আগে, মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয় দেশের রাজনীতি, শিক্ষা, সংস্কৃতি, খেলাধুলা এবং গবেষণায় অসামান্য অবদানের স্বীকৃতি স্বরুপ জাতীয় নারী ফুটবল দল এবং চার বিশিষ্ট নারীকে এই বছরের পুরস্কারের জন্য নির্বাচিত করে।
খেলাধুলার ক্ষেত্রে সাফ ফুটবল-২০২২ এ অপরাজিত চ্যাম্পিয়ন জাতীয় নারী ফুটবল দল ছাড়াও আরও চার নারী এই পদক লাভ করেন। তাঁরা হচ্ছেন-রাজনীতিতে অ্যাডভোকেট সাহারা খাতুন (মরণোত্তর), শিক্ষা, সংস্কৃতি ও খেলাধুলায় নাসিমা জামান ববি ও অনিমা মুক্তি গোমেজ এবং গবেষণায় ডা. সেঁজুতি সাহা (মলিকুলার বায়োলজিস্ট)।

অনুষ্ঠানে মহিলা ও শিশুবিষয়ক প্রতিমন্ত্রী ফজিলাতুন নেসা ইন্দিরার সভাপতিত্বে স্বাগত বক্তব্য রাখেন মন্ত্রণালয়ের সচিব নাজমা মোবারেক।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উইমেন অ্যান্ড জেন্ডার স্টাডিজ বিভাগের অধ্যাপক ড. তানিয়া হক বঙ্গমাতার জীবন ও কর্মকা-ের ওপর ভিত্তি করে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন এবং আলোচনায় অংশ নেন জাতীয় মহিলা সংস্থার চেয়ারম্যান বেগম চেমন আরা তৈয়ব।
পুরস্কারপ্রাপ্তদের পক্ষে বক্তব্য রাখেন জাতীয় মহিলা ফুটবল দলের অধিনায়ক সাবিনা খাতুন।
শুরুতে বঙ্গমাতা বেগম ফজিলাতুন নেছা মুজিবের জীবন ও কর্মের ওপর নির্মিত একটি অডিও-ভিজ্যুয়াল প্রামাণ্যচিত্র প্রদর্শিত হয়।

অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী আর্থিক অনুদান ও সেলাই মেশিন বিতরণ কার্যক্রমেরও উদ্বোধন করেন। সারাদেশের ৪ হাজার ৫০০ দুস্থ মহিলার মধ্যে সেলাই মেশিন এবং ৩ হাজার দুস্থ মহিলার প্রত্যেককে মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে দুই হাজার করে টাকা প্রদান করা হয়।

Share on facebook
Facebook
Share on twitter
Twitter
Share on linkedin
LinkedIn
Share on whatsapp
WhatsApp
Share on email
Email