
ডেস্ক রিপোর্ট: সাংগঠনিক ছাত্র রাজনীতির বিরুদ্ধে শপথগ্রহণ করেছেন বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) শিক্ষার্থীরা। মঙ্গলবার দুপুর ১টা ২৫ মিনিটে বুয়েট ক্যাফেটেরিয়ার সামনে সম্মিলিত কণ্ঠে এ শপথ পাঠ করেন শিক্ষার্থীরা।শপথে শিক্ষার্থীরা বলেন, আমরা প্রতিজ্ঞা করছি যে, এ বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে সব ধরনের সন্ত্রাস ও সাম্প্রদায়িক অপশক্তিকে সম্মিলিতভাবে রুখে দেব। নৈতিকতার সঙ্গে অসামঞ্জস্যপূর্ণ সব ধরনের বৈষম্যমূলক অপসংস্কৃতি এবং ক্ষমতার অপব্যবহার সমূলে উৎখাত করব।
ছাত্ররাজনীতিতে লেজুড়বৃত্তি ও মৌলবাদের বিরুদ্ধে শপথ গ্রহণসহ আবরার ফাহাদের হত্যা ঘটনায় সংশ্লিষ্টতার দায়ে আজীবন বহিষ্কৃত আশিকুল ইসলাম বিটুর ক্লাসে ফেরার প্রতিবাদ জানিয়েছে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) শিক্ষার্থীরা। এসময় শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ করতে দেখা যায়।
মঙ্গলবার (৮ আগস্ট) দুপুরে বুয়েট ক্যাফেটেরিয়ার সামনে সাধারণ শিক্ষার্থীদের পক্ষ থেকে এই শপথগ্রহণ অনুষ্ঠান হয়।
ইলেক্ট্রিক্যাল অ্যান্ড ইলেকট্রনিকস (ইইই) বিভাগের ২০১৮-১৯ শিক্ষাবর্ষের ছাত্রী তাসমিয়া তাসমিন শপথগ্রহণ অনুষ্ঠানের সঞ্চালনা করেন। এসময় শপথ বাক্যে ক্ষমতার অপব্যবহারকে সম্মিলিতভাবে রুখে দেওয়ার প্রত্যয়ের কথা বলেন শিক্ষার্থীরা। ক্যাম্পাসে আবারো নিরপরাধ কাউকে অত্যাচারের শিকার হতে না হয়, সে ব্যাপারে সোচ্চার থাকার অঙ্গীকারও ব্যক্ত করেন তারা।
শপথগ্রহণ শেষে শিক্ষার্থীরা বলেন, লেজুড়বৃত্তিমূলক ছাত্ররাজনীতির চরমতম রূপ বারবার আঘাত হেনেছে আমাদের বুয়েট ক্যাম্পাসে। ২০০২ সাল থেকে শুরু করে ২০১৯ সাল পর্যন্ত ছাত্ররাজনীতির অন্ধকার অধ্যায় তার ভয়ংকর দাগ রেখে গেছে আমাদের এই ক্যাম্পাসে। কালের পরিক্রমায় নিজেরা আন্দোলন করে দাবি আদায় নিশ্চিত করে সব বাঁধা ডিঙিয়ে সকল শিক্ষার্থী একতাবদ্ধ হয়ে যখন সুস্থ সুন্দর একটি পড়াশোনার পরিবেশ নিশ্চিত করেছে, তখনই আবার বুয়েট শিক্ষার্থীদের নিরপেক্ষ মনোভাবকে বিকৃতভাবে উপস্থাপন করে অপপ্রচার চালাচ্ছে বিভিন্ন স্বার্থান্বেষী মহল।
গত ৩০ জুলাই, ২৪ জন বর্তমান শিক্ষার্থীসহ ৩৪ জনকে সুনামগঞ্জের টাঙ্গুয়ার হাওর থেকে নাশকতার পরিকল্পনার অভিযোগে সন্দেহভাজন হিসেবে আটক করা হয়। পরে আদালতের মাধ্যমে তাদের জামিন মঞ্জুর হয়।
শিক্ষার্থীরা বলেন, এ বিষয়ে আমরা রাষ্ট্রীয় শাসনব্যবস্থার উপর আস্থা রেখে একটি সুষ্ঠু ও দ্রুত বিচার আশা করছি। যদি তারা প্রত্যেকেই দোষী প্রমাণিত হয়, তাহলে সাধারণ শিক্ষার্থীরা অবশ্যই তাদের বিরুদ্ধে থাকবে। একইভাবে যদি তাদের মধ্যে কেউ নির্দোষ প্রমাণিত হয়, তবে নির্দোষরা যেন আর কোনোভাবে হয়রানির স্বীকার না হয়। এসব ব্যাপারে আমরা সচেষ্ট থাকব এবং বুয়েট প্রশাসনের সহযোগিতা কামনা করছি।
একইসঙ্গে সংশ্লিষ্ট শিক্ষার্থীরা ক্যাম্পাসে কোনো সাংগঠনিক ছাত্ররাজনীতির সাথে জড়িত কিনা বা তারা ক্যাম্পাসে অন্য শিক্ষার্থীদের প্রভাবিত করছে কি না এই ব্যাপারে যথাযথ তদন্তের জন্য শিক্ষার্থীরা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কাছে আবেদন জানান।
এসময় শিক্ষার্থীরা বলেন, লেজুড়বৃত্তিমূলক ছাত্ররাজনীতি ও মৌলবাদের বিরুদ্ধে বুয়েট শিক্ষার্থীদের যে দৃঢ় অবস্থান রয়েছে তা থেকে আমরা কোনো অবস্থাতেই সরে আসব না। যেকোন ছাত্ররাজনীতি এবং মৌলবাদের চর্চা বুয়েট ক্যাম্পাসে কখনোই গ্রহণযোগ্য হবে না, তা সে যে দলেরই হোক না কেন। এর আগে ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটিতে পদপ্রাপ্ত দুই শিক্ষার্থীর ব্যাপারেও ক্যাম্পাসে সাংগঠনিক ছাত্র রাজনৈতিক কার্যক্রমে যুক্ত কিনা বা অন্য কাউকে প্রভাবিত করছে কিনা এই মর্মে প্রশাসনের সাথে আলোচনা করা হয়েছে এবং প্রশাসন থেকে তদোপরি ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দেওয়া হয়েছে বলেও জানান তারা।