(পরীক্ষামূলক সম্প্রচার)

আজ: বৃহস্পতিবার, ১৯শে সেপ্টেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ ৪ঠা আশ্বিন, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ ১৬ই রবিউল আউয়াল, ১৪৪৬ হিজরি

প্রধানমন্ত্রীর ঈদ কার্ডে দিনাজপুরের প্রতিবন্ধী আঁখির আঁকা ছবি

শ্রবণ ও বাক প্রতিবন্ধী হিসেবে জন্ম নেওয়ায় যে সন্তানকে এক প্রকার ‘বোঝা’ হিসেবে মনে করে মানসিক কষ্টে ছিলেন আরিফা আক্তার আঁখির মা ও বাবা। সেই সন্তানকে নিয়ে এখন গর্ব করছেন শাহনাজ পারভীন ও আনারুল ইসলাম।

শুধু মা-বাবাই নন, আঁখিকে নিয়ে এখন গর্ব করছে গোটা দিনাজপুরবাসী। এবার পবিত্র ঈদুল আজহা উপলক্ষে প্রধানমন্ত্রীর ঈদ শুভেচ্ছা কার্ডে স্থান পেয়েছে আঁখির হাতে আঁকা দিনাজপুরের ঈদগাহ মাঠের ছবি।

আঁখির আঁকা এ ছবিতে দিনাজপুরের ঐতিহাসিক গোর-এ শহীদ ময়দানে অবস্থিত এশিয়ার সবচেয়ে বড় ঈদগাহ মিনার ও ঈদ জামাতের ছবি তুলে ধরা হয়েছে। আঁখির আঁকা ছবিতে এবার ঈদের রাষ্ট্রীয় শুভেচ্ছা বার্তা বহন করায় এখন অন্যরকম ঈদের আমেজ বইছে প্রতিবন্ধী এ শিক্ষার্থীর পরিবারে।

জন্ম থেকে শ্রবণ ও বাকপ্রতিবন্ধী আরিফা আক্তার আঁখি দিনাজপুর শহরের পশ্চিম বালুয়াডাঙ্গা এলাকার পুরাতন পুস্তক ব্যবসায়ী আনারুল ইসলামের মেয়ে। সে দিনাজপুর বধির ইনস্টিটিউটের অষ্টম শ্রেণির ছাত্রী। শিশুকালেই তার বাবা-মা আঁখির বিশেষ প্রতিভার সন্ধান পান।

আঁখির মা শাহনাজ পারভীন বলেন, আমার মেয়ে যখন জন্মগ্রহণ করে তখন এ রকম একটা মেয়ে আমার ঘরে জন্ম নিল-এই ভেবে খুব কষ্ট পেয়েছিলাম। যখন সে ধীরে ধীরে বড় হতে শুরু করলো, তখন তাকে স্কুলে ভর্তি করলাম। যতই বড় হচ্ছে, ততই তার মধ্যে প্রতিভা জেগে উঠছে।

তিনি বলেন, ছবি আঁকতে পছন্দ করে আঁখি। মুক্তিযুদ্ধ, বঙ্গবন্ধু, পরিবেশ, আকাশ, প্রকৃতিসহ বিভিন্ন ধরনের ছবি আঁকতে ভালো লাগে তার। স্থানীয় পর্যায়ে বিভিন্ন ছবি আঁকার প্রতিযোগিতায় সবার নজর কাড়ে আঁখি। এ জন্য স্থানীয়ভাবে অসংখ্য পুরস্কার রয়েছে আঁখির ভাণ্ডারে।

শিশুকাল থেকে পড়ালেখার প্রতি আগ্রহ লক্ষ্য করে আঁখির পরিবার। কিন্তু কথা বলতে ও শুনতে না পারায় স্বাভাবিক পড়ালেখা সম্ভব হয়নি তার। এক সময় ছবি আঁকতে শুরু করে সে। মেয়ের আগ্রহ দেখে পরিবার তার পাশে দাঁড়ায়। ভর্তি করে দিনাজপুর বধির ইনস্টিটিউটে। পাশাপাশি একটি আর্ট স্কুলেও ভর্তি হয় আঁখি।

মা শাহনাজ পারভীন জানান, ঢাকায় ছবি আঁকা প্রতিযোগিতায় তার মেয়ে প্রথম হয়েছে।

আঁখির বাবা আনারুল ইসলাম বলেন, আমার মেয়ের আঁকা ছবি প্রধানমন্ত্রীর পছন্দ হয়েছে এবং প্রধানমন্ত্রীর ঈদ কার্ডে স্থান পেয়েছে। এটা আমার জন্য অনেক বড় পাওয়া। এ ঈদের আমার পরিবারের জন্য এর চেয়ে আনন্দের আর কি হতে পারে।

নিজের আঁকা ছবি প্রধানমন্ত্রীর ঈদ কার্ডে স্থান পাওয়ায় অত্যন্ত খুশি প্রতিবন্ধী আরিফা আক্তার আঁখি। ইশারা ইঙ্গিতে নিজের ভাষায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রতি ধন্যবাদ জানায় সে। একইসঙ্গে আঁখি তার স্বপ্নকে আরও এগিয়ে নিয়ে যেতে চায়-তার ইশারার ভাষা তেমনই।

এদিকে প্রধানমন্ত্রীর ঈদ শুভেচ্ছা কার্ড নিয়ে সম্প্রতি শহরের পশ্চিম বালুয়াডাঙ্গায় আঁখির বাসায় হাজির হন ঐতিহাসিক গোর-এ শহীদ বড় ময়দানের মূল পরিকল্পনাকারী জাতীয় সংসদের হুইপ ইকবালুর রহিম এমপি। তিনি প্রধানমন্ত্রী ঈদ শুভেচ্ছা কার্ড আঁখির হাতে তুলে দেন।

এ সময় তিনি বলেন, আঁখির প্রতিভায় দিনাজপুরবাসী গর্বিত। শারীরিক প্রতিবন্ধীরা যে সমাজের বোঝা নয়, বরং সম্পদ-তা আঁখি প্রমাণ করেছে। আঁখির এ ছবি শুভেচ্ছা কার্ডে সংযুক্ত করায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রতি কৃতজ্ঞতা জানান তিনি।

আঁখির আঁকা ঐতিহাসিক গোর-এ শহীদ ঈদগাহ ময়দানের ছবি প্রধানমন্ত্রীর ঈদ কার্ডে স্থান পাওয়ায় দিনাজপুর জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকেও আঁখিকে ঈদের শুভেচ্ছা পাঠানো হয়

—-যুগান্তর

 

Share on facebook
Facebook
Share on twitter
Twitter
Share on linkedin
LinkedIn
Share on whatsapp
WhatsApp
Share on email
Email