ডেস্ক রিপোর্ট:বিদেশ থেকে পার্সেল পাঠানোর প্রলোভন দেখিয়ে প্রতারণার মাধ্যমে বিপুল পরিমাণ অর্থ আত্মসাতের অভিযোগে চারজনকে গ্রেপ্তার করেছে র্যাব-১০। গ্রেপ্তার ব্যক্তিদের মধ্যে দুই বিদেশি নাগরিকও রয়েছেন।
তথ্যপ্রযুক্তির সহায়তা ও গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে বুধবার (২৪ মে) র্যাব-১০ এর একটি দল ঢাকার বাড্ডা, বসুন্ধরা আবাসিক এলাকা ও শামীমবাগ এলাকায় বিশেষ চালিয়ে তাদের গ্রেপ্তার করে। বৃহস্পতিবার ঢাকার কারওয়ান বাজারে র্যাব মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এ কথা জানান র্যাব-১০-এর অধিনায়ক অতিরিক্ত ডিআইজি মোহাম্মদ ফরিদ উদ্দিন।
গ্রেপ্তার ব্যক্তিরা হলেন- ইজেরিয়ার নাগরিক চার্লস ইফেন্নাদি উদেজুয়ে (২৭), ফ্রাঙ্ক কোকো ওবিয়ের্কস (৩৫); নারায়ণগঞ্জের শফি মোল্লা (৩৬), ময়মনসিংহের মৌসুমি খাতুন (২৭)। গ্রেপ্তারের সময় তাদের কাছ থেকে একটি মোটরসাইকেল, প্রতারণার কাজে ব্যবহৃত ৮টি মোবাইল ফোনসহ প্রতারণার কাজে ব্যবহৃত ভুয়া ইনভয়েস উদ্ধার করা হয়।
সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, গ্রেপ্তার হওয়া আন্তর্জাতিক প্রতারক চক্রের বিদেশি নাগরিকরা ভ্রমণ ভিসায় বাংলাদেশে এসে ঢাকাসহ বিভিন্ন এলাকায় বাসা ভাড়া নেয়। এদেশে তারা গার্মেন্টস ব্যবসাসহ বিভিন্ন পেশার কাজ শুরু করে। এসব কাজের আড়ালে তারা বাংলাদেশি সহযোগীদের নিয়ে এ অভিনব প্রতারণার সঙ্গে জড়িয়ে পড়ে। গ্রেপ্তার মৌসুমি ও শফি এ অপরাধ চক্রের বাংলাদেশি সদস্য। মূলত তাদের মাধ্যমেই প্রতারক চক্রের বিদেশি নাগরিকরা এ অপরাধমূলক কাজ করে আসছিল।
র্যাব-১০-এর অধিনায়ক অতিরিক্ত ডিআইজি মোহাম্মদ ফরিদ উদ্দিন বলেন, “মুন্সীগঞ্জের সিরাজদীখান থানাধীন এলাকার এক নারীর (২৬) সঙ্গে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ইনস্টাগ্রামে বিদেশি এক ব্যক্তির পরিচয় হয়। একপর্যায়ে গত ১৭ মে ওই ব্যক্তি ভুক্তভোগীর ঠিকানায় একটি পার্সেল পাঠানোর পর বিমানবন্দর থেকে তা সংগ্রহ করতে বলে। গত ১৮ মে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর কাস্টমসের পরিচয় দিয়ে অজ্ঞাতনামা এক নারী তাকে জানায় তার নামে একটি অতি মূল্যবান পার্সেল বিমানবন্দরে এসেছে। এটি ডেলিভারি করতে কাস্টমস চার্জ হিসেবে ৬০ হাজার টাকা ব্যাংকে পরিশোধ করতে হবে।”
তিনি আরও বলেন, “কথামতো ভুক্তভোগী নারী অজ্ঞাতনামা ব্যক্তির দেওয়া ব্যাংক অ্যাকাউন্টের মাধ্যমে ৩৫ হাজার টাকা দেন। ওই ব্যক্তি আবারও জানায় যে সিকিউরিটির জন্য আরও ৩০ হাজার টাকা দিতে হবে। এ জন্য বিভিন্নভাবে চাপ প্রয়োগ করতে থাকে। পরে ওই নারী আরও ৩০ হাজার টাকা পাঠান। তিনি পার্সেলের জন্য সেই নম্বরে যোগাযোগ করলে অজ্ঞাতনামা নারী জানায় পার্সেল বাসায় পৌঁছে দেওয়া হবে। কিছুদিন পর পার্সেলের জন্য যোগাযোগ করলে আরও ৮ হাজার ৩২০ টাকা বিকাশে পাঠানোর জন্য বললে ভুক্তভোগী তার আত্মীয়দের বিষয়টি জানান। এরপর তারা র্যাবের কাছে অভিযোগ করেন।”
মোহাম্মদ ফরিদ উদ্দিন বলেন, “গ্রেপ্তার ব্যক্তিরা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভুয়া আইডি খুলে বিভিন্ন প্রোফাইল ঘেঁটে ব্যবসায়ী, চাকরিজীবী, উচ্চবিত্তসহ সহজ-সরল মানুষকে ফ্রেন্ড রিকুয়েস্ট পাঠায়। সবার কাছে তারা নিজেদের পশ্চিমা বিশ্বের একটি উন্নত দেশের ধনী ব্যক্তি হিসেবে পরিচয় দেয়। একসময় বিশ্বাস স্থাপনের মাধ্যমে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক গড়ে তোলে। পরে সম্পর্ক আরও গভীর করার জন্য উপহার পাঠাতে চায়। বাংলাদেশের লোকজনও বিশ্বাস করে পার্সেল গ্রহণ করতে যায়। এভাবে প্রতারক চক্রটিকে বিপুল পরিমাণ টাকা হাতিয়ে নেয়।”