(পরীক্ষামূলক সম্প্রচার)

আজ: বুধবার, ২২শে জানুয়ারি, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ ৮ই মাঘ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ ২২শে রজব, ১৪৪৬ হিজরি

মনিপুরে সহিংসতায় নিহতের সংখ্যা বেড়ে ৫৪

ভারতের মনিপুর রাজ্যে জাতিগত সংঘর্ষের পর শনিবার মৃতের সংখ্যা বেড়ে ৫৪তে পৌঁছেছে। কর্তৃপক্ষ রাজ্যে শৃঙ্খলা পুনরুদ্ধারের জন্য সেনা মোতায়েন করলেও নতুন সহিংসতার খবর পাওয়া গেছে।বুধবার একটি উপজাতিগোষ্ঠীর বিক্ষোভ মিছিল থেকে সহিংসতা ছড়িয়ে পড়লে হাজার হাজার সেনা মনিপুর রাজ্যে পাঠানো হয়। কর্তৃপক্ষ সেখানে ইন্টারনেট পরিষেবা বন্ধ করে দিয়েছে এবং অস্থিরতা নিয়ন্ত্রণের প্রয়াসে ‘চূড়ান্ত পরিস্থিতি’ দেখামাত্র গুলির আদেশ জারি করেছে।

পুলিশ এএফপিকে জানিয়েছে, শুক্রবার রাতে নতুন করে সহিংসতার পর পরিস্থিতি উত্তেজনাপূর্ণ ছিল। অন্যদিকে দ্য প্রেস ট্রাস্ট অব ইন্ডিয়া (পিটিআই) বলেছে, রাজ্যের রাজধানী ইম্ফল এবং আরো দক্ষিণে চুরাচাঁদপুর জেলার হাসপাতালের মর্গে মিলিতভাবে মোট ৫৪ জনের মরদেহ পৌঁছানোর খবর পাওয়া গেছে।পিটিআই নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক স্থানীয় কর্মকর্তার বরাত দিয়ে জানায়, ‘১৬টি মরদেহ চুরাচাঁদপুর জেলা হাসপাতালের মর্গে রাখা হয়েছে এবং ১৫টি মরদেহ ইম্ফলের পূর্ব জেলা জওহরলাল নেহেরু ইনস্টিটিউট অব মেডিক্যাল সায়েন্সে রয়েছে। ইম্ফল পশ্চিম জেলার ল্যামফেলের আঞ্চলিক ইনস্টিটিউট অব মেডিক্যাল সায়েন্সেস ২৩ জনের মৃত্যুর খবর দিয়েছে।’মনিপুর পুলিশের মহাপরিচালক পি ডউঙ্গেল শুক্রবার সাংবাদিকদের জানান, নিরাপত্তা বাহিনী পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনার চেষ্টা করছে। তিনি বলেন, সেনাবাহিনীর টহলদলগুলো ‘পরিস্থিতি শান্ত করার ব্যাপারে অনেক দূর এগিয়েছে’।এদিকে নিরাপত্তা বাহিনী এবং মনিপুর সরকার এখনো এই সপ্তাহের সহিংসতার জন্য সরকারিভাবে মৃতের সংখ্যা জানায়নি। তবে ভারতের আইনমন্ত্রী কিরেন রিজিজু শনিবার সাংবাদিকদের বলেছেন, সম্পত্তির ক্ষতির পাশাপাশি কয়েক দিনের সংঘর্ষের পর ‘অনেকে প্রাণ হারিয়েছে’।

ইন্টারনেট পরিষেবা বন্ধ থাকায় মনিপুর থেকে তথ্যের প্রবাহ বাধাগ্রস্ত হয়েছে। এতে শুক্রবারের সর্বশেষ সংঘর্ষের খবর ঠিকভাবে পাওয়া যায়নি। প্রতিবেশী নাগাল্যান্ড রাজ্যে অবস্থিত একটি ভারতীয় সেনা ইউনিট বলেছে, ১৩ হাজার লোক ‘সামরিক চত্বরে’ সহিংসতা থেকে আশ্রয় চেয়েছিল।নিরাপত্তা বাহিনী বৃহস্পতিবার ইম্ফলে বিক্ষোভকারীদের ছত্রভঙ্গ করতে টিয়ার শেল নিক্ষেপ করেছে। বিক্ষোভকারীদের কেউ কেউ শহরের কিছু অংশে যানবাহন ও বাড়িঘর পুড়িয়ে দিয়েছে। সার্বক্ষণিক কারফিউর কারণে রাস্তায় পোড়া যানবাহন অথবা খালি রাস্তা দেখা গেছে। প্রতিরক্ষা কর্মকর্তারা শুক্রবার বলেছেন, সড়ক ও আকাশপথে রাজ্যে অতিরিক্ত সেনা আনা হয়েছে।

সংঘাতের ইতিহাস
উপজাতিগোষ্ঠীগুলো রাজ্যের সংখ্যাগরিষ্ঠ মেইতেই সম্প্রদায়ের দাবির বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করছিল ‘তফসিলি উপজাতি’ হিসেবে স্বীকৃতি পাওয়ার জন্য। ভারতীয় আইন কাঠামোগত বৈষম্য ও বৈষম্য মোকাবেলায় ইতিবাচক পদক্ষেপ হিসেবে সরকারি চাকরি এবং কলেজে ভর্তির জন্য এই স্বীকৃতি সংরক্ষিত কোটার অধীন উপজাতিদের দিয়ে থাকে।মনিপুর ভারতের প্রত্যন্ত উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্য। এটি একটি সংকীর্ণ স্থল করিডরের মাধ্যমে দেশের বাকি অংশের সঙ্গে যুক্ত একটি অঞ্চল, যা জাতিগত এবং বিচ্ছিন্নতাবাদী গোষ্ঠীগুলোর মধ্যে কয়েক দশক ধরে অশান্তি দেখেছে।উত্তর-পূর্বাঞ্চলে কয়েক ডজন উপজাতিগোষ্ঠী এবং ছোট গেরিলা বাহিনী রয়েছে। তাদের দাবি, বৃহত্তর স্বায়ত্তশাসনের মাধ্যমে ভারত থেকে বিচ্ছিন্ন হওয়া।পঞ্চাশের দশকের গোড়ার দিকে মনিপুরে প্রথম বিদ্রোহ শুরু হয়। এর পর থেকে সংঘাতে অন্তত ৫০ হাজার মানুষ প্রাণ হারিয়েছে। বছরের পর বছর ধরে এই বিরোধগুলো হ্রাস পেয়েছে, অনেক গোষ্ঠী নয়াদিল্লির সঙ্গে আরো ক্ষমতার জন্য চুক্তি করেছে।

সূত্র : এএফপি

 

Share on facebook
Facebook
Share on twitter
Twitter
Share on linkedin
LinkedIn
Share on whatsapp
WhatsApp
Share on email
Email