ডেস্ক রিপোর্ট: অস্ট্রেলিয়ার নিউ সাউথ ওয়েস্টের সুদূর পশ্চিমে মেনিন্ডি শহরের কাছে ডার্লিং-বাকা নদীতে লক্ষাধিক মাছ মারা গেছে। বনি ব্রিম, মারে কড, গোল্ডেন পার্চ, সিলভার পার্চ এবং কার্প জাতীয় মাছের দেহ ভেসে উঠেছে নদীর পানিতে। একসাথে এতগুলো মাছের মৃত্যুর জেরে মারে-ডার্লিং নদীর পানির গুণগত মান নিয়ে প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে । গার্ডিয়ান অস্ট্রেলিয়ার সাথে কথা বলার সময় মেনিন্ডির বাসিন্দারা বলছেন যে, এর আগেও নদীতে মাছ ভেসে উঠেছে। তবে লক্ষাধিক মাছের মৃত্যু এই প্রথম । ২০১৯ সালে একই অঞ্চলে খরার সময় প্রায় দশ লাখ মাছ মারা গিয়েছিল কারণ তাপমাত্রার দ্রুত বৃদ্ধির ফলে নদীতে অক্সিজেনের ঘাটতি দেখা দিয়েছিলো। ২০১২ সালে, নদীটির পানি শুকিয়ে যাওয়া থেকে রক্ষায় ১৩ বিলিয়ন ডলার খরচ করা হয় এবং স্বাস্থ্যকর স্তরে ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করা হয়। মারে ডার্লিং বেসিন কর্তৃপক্ষ বলছে, কৃষি, শিল্প ও অন্যান্য কাজে স্থানীয়রা নদীর পানি ব্যাপক হারে ব্যবহার করেছে। ফলে জলের প্রবাহ কম। এর মধ্যেই মেনিন্ডি শহরে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ৪১ ডিগ্রি সেলসিয়াস ছুঁতে পারে বলে আশঙ্কা।
প্রসঙ্গত, ডার্লিং–বাকা নদীটি অস্ট্রেলিয়ার সবচেয়ে বড় ‘মারে ডার্লিং বেসিনের’ অন্তর্গত। জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে তীব্র তাপপ্রবাহের প্রভাব পড়ছে প্রাকৃতিক পরিবেশের ওপর। NSW ডিপার্টমেন্ট অফ প্রাইমারি ইন্ডাস্ট্রিজ বলেছে যে, আনুমানিক ৩২ লাখ মাছের মৃত্যু ঘটেছে, যাকে মাছের মড়ক বলছেন তারা। সংস্থার এক মুখপাত্র বলছেন, “কার্প এবং বনি ব্রিম জাতীয় মাছ প্লাবনভূমি থেকে পুষ্টি এবং জৈব পদার্থ সংগ্রহ করে। এই অঞ্চলে যে হারে তাপমাত্রা বাড়ছে তার জেরে উষ্ণ জলে অক্সিজেনের পরিমাণ কমছে। উষ্ণ তাপমাত্রায় মাছের অক্সিজেনের চাহিদা বেশি থাকে। ”মেনিন্ডির একজন ফটোগ্রাফার জিওফ লুনি বলেছেন, সাম্প্রতিক মাছের মড়ক মারাত্মক ছিল। কারণ এবার নদীতে খুব কমই জীবন্ত মাছ রয়েছে। শহরবাসীরা চিন্তায় পড়েছেন এই নদীর পানি তারা আর ব্যবহার করতে পারবেন না। মরা মাছের গন্ধে শহরে টেকাই দায় হয়ে উঠেছে। ইউনিভার্সিটি অফ সিডনির স্কুল অফ লাইফ অ্যান্ড এনভায়রনমেন্টাল সায়েন্সেসের সহযোগী অধ্যাপক জয় বেকার বলেছেন, একটি তদন্তের মাধ্যমে মাছগুলোর গণ মৃত্যুর কারণ নির্ধারণ করা উচিত। তার মতে, এটা মনে রাখা গুরুত্বপূর্ণ যে, মাছের মৃত্যুর ঘটনাগুলি শুধুমাত্র মারে কড এবং বনি ব্রিমের মতো বড় মাছকেই প্রভাবিত করে না, ছোট শরীরের মাছগুলিকেও প্রভাবিত করে যার একটি স্বাস্থ্যকর জলজ বাস্তুতন্ত্র বজায় রাখার জন্য অপরিহার্য। স্থানীয় এমপি জাস্টিন ফিল্ডের মতে, “আমরা জলবায়ু পরিবর্তনের যুগে বাস করছি, সরকারের দুর্বল সিদ্ধান্তের কারণে বন্যা ও খরা বেড়ে যাচ্ছে। ব্যাপকহারে মাছ মরার ঘটনা স্বাভাবিক হতে পারে না।
সূত্র : দ্য গার্ডিয়ান