ডেস্ক রিপোর্ট: দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের আগে দেশের পাঁচটি সিটি কর্পোরেশনে ভোট করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন নির্বাচন কমিশন (ইসি)। তিন ধাপে ঈদুল আজহার আগে মে থেকে জুন মাসের মধ্যে গাজীপুর, রাজশাহী, বরিশাল, সিলেট ও খুলনা সিটি করপোরেশনের নির্বাচন করা হবে।
আজ বুধবার নির্বাচন কমিশনের সভা শেষে এক ব্রিফিংয়ে সভার নীতিগত সিদ্ধান্তের কথা জানান ইসি সচিব মো. জাহাংগীর আলম।
সকালে আগারগাঁওয়ের নির্বাচন ভবনে সিইসি কাজী হাবিবুল আউয়ালের সভাপতিত্বে এই সভা হয়।
সভা শেষে ইসির সিদ্ধান্তের বিষয়ে ইসি সচিব মো. জাহাংগীর আলম বলেন, ২৯ জুনের মধ্যে ৫ সিটিকে ভোট হবে। কোনটাতে কখন হবে পরে জানাবো। আমরা মে থেকে জুনের মধ্যে নির্বাচন করবো। এইচএসসি পরীক্ষা হবে সম্ভাব্য ৭ জুলাই থেকে। সে জন্য এসএসসি পরীক্ষা শেষে ২৩ মে থেকে ২৯ জুনের মধ্যবর্তী সময়ের তিন ধাপে পাঁচটি সিটির ভোট করার বিষয়ে প্রাথমিক সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
সংসদের ভোটের আগে সিটিতে ভোট হবে জানিয়ে তিনি বলেন, পাঁচটি সিটি নির্বাচন সংসদ নির্বাচনের আগে করতে হবে। প্রাথমিক আলোচনা হয়েছে, আগামী এপ্রিলে পবিত্র রমজান মাস শেষে এসএসসি পরীক্ষা ২৩ মে পযন্ত, ২৯ জুলাই হচ্ছে ঈদুল আজহা।
সচিব বলেন, ঈদুল আজহার আগে এবং এসএসসি পরীক্ষা শেষে এ মধ্যবর্তী সময়ে আমরা এ পাঁচটি সিটি করপোরেশনের নির্বাচন আয়োজন করবো, এমন সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। পরবর্তীত তফসিলের সময় কোনটা কোন তারিখে হবে, তা বিস্তারিত জানানো হবে।
এপ্রিলের মাঝামাঝি সময়ে তফসিল ঘোষণা করা হবে বলেও উল্লেখ করেন সচিব মো. জাহাংগীর আলম।মেয়াদ বিবেচনা করে এপ্রিলের মধ্যে তফসিল ঘোষণা করা হবে। সে ক্ষেত্রে ইভিএমে সব নির্বাচন হবে। সিসি ক্যামেরা রাখার বিষয়ে পরিকল্পনা থাকলেও তা করা হবে কি না, ওই সময়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
কমিশন সভায় আর যেসব বিষয়ে আলোচনা
সংসদ নির্বাচনে ভোটগ্রহণে ইভিএম ব্যবহার ও নির্বাচনী প্রস্তুতি নিয়েও সভায় আলোচনা হয়।
ইসি সচিব জানান, ‘রোডম্যাপের আলোকে’ কোন কাজে কতটুকু অগ্রগতি, তা কমিশনকে জানানো হযেছে। চূড়ান্ত ভোটার তালিকা প্রকাশ, নতুন দল নিবন্ধন, নির্বাচনী সীমানার খসড়া প্রকাশ, পর্যবেক্ষক সংস্থার আবেদন যাচাই বাছাই চলছে।
‘মেশিন টুলস ফ্যাক্টরি থেকে প্রাপ্ত তথ্যমতে- যে ১ লাখ ১০ হাজার মেশিনকে মেরামত করে আমরা আসন্ন দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে ব্যবহার করতে পারব। অর্থমন্ত্রণালয়ের অর্থ প্রাপ্তি সাপেক্ষে আমরা সংখ্যাটা (ইভিএম ও আসনে) ব্যবহার হবে, তা চূড়ান্ত করতে পারব। এটা কমিশন সভায় সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত হয়েছে।’
অর্থ ছাড়ে চিঠি দেওয়া হবে বলেও জানান তিনি। বলেন, ‘যদি সম্মতি দেয় তাহলে পরবর্তী ধাপে আমরা জানাতে পারব আসলে কোন কোন আসনে কতটি নির্বাচনী এলাকায় ইভিএম ব্যবহার করতে পারব।’
সর্বোচ্চ ৬০-৭০টি আসনে সম্ভব কি না. জানতে চাইলে সচিব বলেন, ‘বিষয়টি নিয়ে পরবর্তীতে সিদ্ধান্ত হবে।’
তিনি বলেন, ‘সংখ্যা নির্ভর করবে ইভিএম মেশিনের ওপর। কতগুলোকে ব্যবহারযোগ্য করে তুলতে পারব, তার ওপর নির্ভর করছে কতটি আসনে ইভিএমে ভোট হবে। সক্ষমতার বিষয়ে কমিশন সব সময় বলেছে, সর্বোচ্চ ৭০ থেকে ৮০ আসনে ইভিএম ব্যবহার করা যাবে। এটার আপ্রাণ চেষ্টা করা হবে, এ সিদ্ধান্ত থেকে আমরা সরে আসিনি।’
সচিব জানান, আয়তনে ছোট এবং ভোটার সংখ্যা কম, এমন এলাকা বেছে নিলে বেশি সংখ্যক আসনে ইভিএমে ভোট নেওয়া যাবে। এলাকা বড় হলে ইভিএমের আসন কমে যাবে।
দুবাইয়ে প্রবাসী বাংলাদেশিদের এনআইডি ঈদের পর
সচিব জানান, ঈদুল ফিতরের পরে সংযুক্ত আরব আমিরাতে একটি দল পাঠিয়ে প্রবাসীদের এনআইডি সেবার বিষয়ে প্রাইলট প্রকল্প চালু করা হবে।ভোটাররা সংশ্লিষ্ট দূতাবাসে এসে আবেদন করবেন। সেই আবেদন স্থানীয়ভাবে যাচাই বাছাই ও তদন্ত হবে। পরে দূতাবাসে এসে ফিঙ্গার প্রিন্ট ও অন্যান্য তথ্য নেওয়া হবে।
এরপর নির্বাচন কমিশন স্মার্ট কার্ড তৈরি করে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে সংশ্লিষ্ট দূতাবাসে পাঠানো হবে। সেখান থেকে এনআইডি নিতে পারবেন প্রবাসী বাংলাদেশিরা।
এখন পর্যন্ত ছয় দেশ থেকে পাঁচ হাজারের বেশি প্রবাসী বাংলাদেশির ভোটার নিবন্ধনের আবেদন পাওয়ার পর তাদের স্থানীয় ঠিকানা যাচাই-বাছাইয়ের কাজ চলছে। এর মধ্যে সাড়ে চার হাজার আবেদনের তদন্ত বাকি রয়েছে; প্রায় তিনশ আবেদন অনুমোদন পেয়েছে আর দুইশ আবেদন বাতিল হয়েছে।মহামারীর মধ্যে এনআইডি দেওয়ার কাজটি আর আগায়নি। যেসব আবেদন পাওয়া গেছে, দেশে স্থানীয়ভাবে কয়েকশ আবেদনের বিষয়ে সরেজমিন তদন্ত করা হলেও এনআইডি দেওয়া যায়নি।