ডেস্ক রিপোর্ট: জনপ্রিয় ভিডিও শেয়ারিং অ্যাপস টিকটকের বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রে দীর্ঘদিন ধরে নিরাপত্তা লঙ্ঘনের অভিযোগ উঠেছে। চীনের মালিকানাধীন এই মাধ্যমটির বিরুদ্ধে তথ্যপাচারের অভিযোগও তুলেছে হোয়াইট হাউস। তবে এসব অভিযোগকে অসত্য বলে দাবি করেছে টিকটক।সোমবার (২৭ ফেব্রুয়ারি) হোয়াইট হাউস সরকারি সংস্থাগুলোর সব ধরনের ডিভাইস থেকে টিকটক অ্যাপসটি সরিয়ে ফেলার নির্দেশনা দিয়েছে। আগামী ৩০ দিনের মধ্যে এই নির্দেশ কার্যকর করতে বলা হয়েছে।
নির্দেশিকাতে বলা হয়েছে, মার্কিন ডেটা সুরক্ষিত রাখতে ফেডারেল সংস্থাগুলোকে অবশ্যই ফোন ও অন্যান্য সিস্টেম থেকে টিকটক সরিয়ে ফেলতে হবে। টিকটকের কোনো সংযোগ যেন সরকারি কোনো নেটওয়ার্কে না থাকে সে বিষয়েও কঠোরভাবে বলা হয়েছে। নির্দেশিকাটিতে অফিস অব ম্যানেজমেন্ট ও বাজেট বিভাগের পরিচালক শালান্দা ইয়াংয়ের সই রয়েছে। এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে বার্তা সংস্থা রয়টার্স।এর আগে গত বছরের ডিসেম্বরে যুক্তরাষ্ট্রে টিকটক নিষিদ্ধ করতে নতুন একটি বিল প্রস্তাবটি উত্থাপন করা হয়। টিকটকের প্রভাব-প্রতিপত্তি নিয়ে মার্কিন নীতিনির্ধারকদের ক্রমবর্ধমান শঙ্কারই প্রতিফল ঘটেছে ওই বিলে।ইতোমধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের সাতটি অঙ্গরাজ্যে সরকারি ডিভাইসে টিকটক ব্যবহারের ওপর নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রে ব্যবসা ধরে রাখতে বেশ কয়েক বছর ধরেই দেশটির সরকারি পর্যায়ে আলোচনা চালিয়ে আসছেন টিকটকের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তারা।তাদের দাবি, “জাতীয় নিরাপত্তা শঙ্কা দূর করে” মার্কিন গ্রাহকদের সেবা অব্যাহত রাখার চেষ্টা করছেন তারা।এর আগে টিকটক মুখপাত্র হিলারি ম্যাককেইড এক বিবৃতিতে বলেছিলেন, “প্রশাসনকে টিকটকের নিরাপত্তা ঝুঁকি পর্যালোচনা প্রক্রিয়া দ্রুত শেষ করার তাড়া না দিয়ে কংগ্রেসের কিছু সদস্য রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে টিকটক নিষিদ্ধ করার চেষ্টা করছেন, এটা দুশ্চিন্তার বিষয়। যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় নিরাপত্তা পরিস্থিতির উন্নয়নে এটা কোনো ভূমিকাই রাখবে না।”
টিকটক এর আগেও দাবি করেছে যে, তারা চীন সরকারকে যুক্তরাষ্ট্রের ব্যবহারকারীদের কোনো তথ্য সরবরাহ করে না এবং চীন থেকে কেউ মার্কিনদের ডেটায় প্রবেশাধিকার পাবেন কিনা, সে সিদ্ধান্তও যুক্তরাষ্ট্রের স্থানীয় কর্মীদের হাতে থাকে।
তবে চীনের কর্মীদেরও যে আন্তর্জাতিক ব্যবহারকারীদের গোপন ডেটায় প্রবেশের সুযোগ আছে, সে বিষয়ে আগেই স্বীকারোক্তি দিয়েছিল টিকটক।
কানাডায়ও নিষিদ্ধ টিকটক
কানাডায় সব ধরনের সরকারি ডিভাইসে ভিডিও শেয়ারিং অ্যাপ টিকটক নিষিদ্ধ করেছে দেশটির সরকার, যা কার্যকর হচ্ছে মঙ্গলবার থেকেই।ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি জানিয়েছে, ওই অ্যাপ গোপনীয়তা ও তথ্যের সুরক্ষার ক্ষেত্রে “অগ্রহণযোগ্য মাত্রায় ঝুঁকি তৈরি করছে” বলে কানাডার প্রধান তথ্য কর্মকর্তা পর্যবেক্ষণ দেওয়ার পর এ সিদ্ধান্ত নেওয়ার কথা জানিয়েছে দেশটির কর্তৃপক্ষ।টিকটকের একজন মুখপাত্র বলেছেন, “কানাডা সরকারের এমন সিদ্ধান্তে তাদের কোম্পানি হতাশ।”ইউরোপীয় কমিশন টিকটকের ক্ষেত্রে একই ধরনের নিষেধাজ্ঞা দেওয়ার কয়েক দিনের মধ্যে এ সিদ্ধান্ত নিল কানাডা।দেশটির প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো বলেছেন, “ওই অ্যাপের কারণে নিরাপত্তা নিয়ে ‘যথেষ্ট উদ্বেগ’ তৈরি হয়েছিল বলেই এ রকম সিদ্ধান্ত নিতে হয়েছে। হতে পারে এটাই আমাদের প্রথম পদক্ষেপ। আবার এমনও হতে পারে, এরপর আর কোনো পদক্ষেপ আমাদের নিতে হবে না।”ব্যবহারকারীদের ব্যক্তিগত তথ্য সংগ্রহ এবং চীন সরকারের সঙ্গে টিকটকের যোগাযোগের বিষয়টিই এ অ্যাপ নিয়ে সমালোচনা ও উদ্বেগের মূল কারণ।এই শর্ট-ফর্ম ভিডিও অ্যাপটির মালিক চীনা কোম্পানি বাইটড্যান্স লিমিটেড। যুক্তরাষ্ট্রে গত বছরের শেষ দিকে সরকারি কর্মীদের জন্য টিকটক ব্যবহার নিষিদ্ধ করা হয়। আর গত সোমবার হোয়াইট হাউস যুক্তরাষ্ট্রের সব সরকারি সংস্থার সিস্টেম থেকে অ্যাপটি মুছে ফেলার জন্য ৩০ দিন সময় দেয়।