খাদ্যপণ্যের জোগান নিশ্চিতের মূল কারিগর যারা, তারা কি পরিশ্রমের ন্যায্যমূল্য পাচ্ছেন? পেলেও তা কতটুকু? হিসাব করলে দেখা যায়, ধানের পুরো মৌসুম পরিশ্রম শেষে প্রতি কেজি ধান বিক্রি করে একজন চাষির লাভ হয় সোয়া এক টাকা। যদিও খাদ্য মন্ত্রণালয়ের দাবি, ধান উৎপাদনে আয়-ব্যয় হিসাব কষেই দাম নির্ধারণ করছে সরকার।
চলতি আমন মৌসুমে এক কেজি ধানের দাম ২৮ টাকা নির্ধারণ করেছে সরকার। অথচ খোদ কৃষি বিভাগের মাঠ জরিপেই উঠে এসেছে, সম্প্রতি শেষ হওয়া আমনের প্রতি কেজি ধান উৎপাদনে কৃষকের খরচ হয়েছে ২৬ টাকা ৭৬ পয়সা। অর্থাৎ প্রতি কেজিতে লাভ মাত্র এক টাকা ২৪ পয়সা।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপপরিচালক (কো-অর্ডিনেশন) ড. মঝহারুল আজিজ বলেন, গত বছর আমাদের দেশে আমন ধানের উৎপাদন ব্যয় ছিল কেজিপ্রতি ২৫ টাকা ৭৮ পয়সা। এ বছর তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২৬ টাকা ৭৬ পয়সা।
কৃষকরা বলেন, সব জিনিসের দাম বাড়তি, শুধু ধানের দামই কম। যদি ধানের দাম ৪০ টাকা কেজি করা হয়, তাহলে আমাদের লাভ হবে।
এদিকে দাম নিয়ে সরকারি-বেসরকারি পর্যায়ে তথ্যের ভিন্নতা থাকলেও সঠিকভাবে হিসাব কষেই কমিটি ধানের দাম নির্ধারণ করে বলে দাবি করেন খাদ্য সচিব মো. ইসমাইল হোসেন।
তিনি বলেন, ‘দাম কম নির্ধারণ করা হয়েছে, তা আমি কেন স্বীকার করছি না? কারণ ধান কৃষকের একমাত্র পণ্য না। ধান থেকে কৃষকরা আরও আয় করেন। যেমন, উদাহরণ হিসেবে বলা যেতে পারে; কৃষক ধান উৎপাদনের পর খড়ও বিক্রি করেন। আমাদের যে খাদ্য পরিধারণ কমিটি আছে, সেটি ক্যাবিনেটের একটি বড় কমিটি। মন্ত্রীরাও এ কমিটিতে আছেন। তারা পর্যালোচনার করেই এটি নির্ধারণ করেছেন।’
কৃষি সম্প্রসারণের তথ্য অনুযায়ী, ২০২২-২৩ অর্থবছরে প্রতি বিঘায় আমন ধান হয়েছে ৫৮০ কেজি বা সাড়ে ১৪ মণ। উৎপাদন খরচ কেজিতে ২৬ টাকা ৭৬ পয়সা। সরকার নির্ধারণ করেছে প্রতি কেজি ২৮ টাকা। সে হিসেবে মৌসুমে ধান চাষ করে প্রতি বিঘায় চাষি লাভ করে মাত্র ৭১৯ টাকা, মাস হিসাবে যা দাঁড়ায় ১৮০ টাকা।
সার, বীজ, জ্বালানি তেলসহ সব কৃষি উপকরণের দাম যখন ঊর্ধ্বমুখী, তখন ধানের এমন অবাস্তব দাম নির্ধারণকে অযৌক্তিক বলছেন কৃষি অর্থনীতিবিদ মো. নজরুল ইসলাম।
তিনি বলেন, সরকারের ভেতরে এমন অনেক ব্যবসায়ী আছে, যারা ফায়দা লোটার জন্য অত পেতে থাকে। যার কারণে দিনশেষে কৃষকই বঞ্চিত হচ্ছে। তারা হয় তো সরকারের নির্ধারিত দামের থেকে কিছু বেশি টাকা দিয়ে কৃষকের থেকে ধান কিনেন, কিন্তু পরিশেষে তারা আরও বেশি দামে ভোক্তার কাছে বিক্রি করে।
উৎপাদন করে ন্যায্যমূল না পেলে আগামীতে ধান চাষে কৃষকরা আগ্রহ হারাবে বলে আশঙ্কা করছেন কৃষিসংশ্লিষ্টরা।