দেশে বেসরকারি খাতের সবচেয়ে বড় এস আলমের বিদ্যুৎকেন্দ্র জাতীয় গ্রিডের সঙ্গে যুক্ত করা হয়েছে।
দেশে বেসরকারি খাতের সবচেয়ে বড় বিদ্যুৎ উৎপাদন প্রকল্পের কাজ মোটামুটি শেষ হয়েছে। জাতীয় গ্রিডের সঙ্গে যুক্ত করা হয়েছে বিদ্যুৎকেন্দ্রটিকে। আগামী এপ্রিলে বাণিজ্যিকভাবে বিদ্যুৎকেন্দ্রটি উৎপাদনে যাওয়ার ঘোষণা এসেছে
বঙ্গোপসাগরের তীরে চট্টগ্রামের বাঁশখালী উপজেলায় কয়লাভিত্তিক ১ হাজার ৩২০ মেগাওয়াটের বিদ্যুৎকেন্দ্রটি যৌথ উদ্যোগে নির্মাণ করেছে দেশের অন্যতম বৃহৎ শিল্পগোষ্ঠী এস আলম গ্রুপ ও চীনা প্রতিষ্ঠান সেপকো-এইচটিজি।
শনিবার (১৪ জানুয়ারি) সকালে বাঁশখালীর গণ্ডামারায় ‘এস এস পাওয়ার প্ল্যান্ট’ পরিদর্শনে যান সরকারিভাবে গঠিত ব্যাকফিড কমিটির নয় সদস্য। কমিটির প্রধান পাওয়ার গ্রিড কোম্পানি বাংলাদেশের (পিজিসিবি) প্রধান প্রকৌশলী মোরশেদ আলম খান সুইচ অন করে জাতীয় গ্রিডের ৪০০ কেভি সঞ্চালন লাইনের সঙ্গে বিদ্যুৎকেন্দ্রের সংযোগ স্থাপন করেন। এর মধ্য দিয়ে এস এস পাওয়ার প্ল্যান্ট থেকে জাতীয় গ্রিডে বিদ্যুৎ সরবরাহ শুরু হয়।
এ সময় পিজিসিবির প্রধান প্রকৌশলী মোরশেদ আলম খান বলেন, ‘প্রকল্পের কাজ ৯৭ শতাংশ শেষ হয়েছে। বাকি তিন শতাংশের মধ্যে আছে রাস্তা ও নালা তৈরির কাজ। দ্রুততম সময়ের মধ্যে সেটিও শেষ হয়ে যাবে। এপ্রিল মাসে বাণিজ্যিক উৎপাদন শুরু করা যাবে বলে আমরা আশা করছি। বাংলাদেশে শতভাগ বিদ্যুতায়ন ও শিল্পায়নের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে এ প্রকল্প।
কয়লাভিত্তিক প্রকল্প হলেও পরিবেশ দূষণের আশঙ্কা নেই জানিয়ে তিনি বলেন, ‘এটি সুপার ক্রিটিক্যাল প্রযুক্তির প্রকল্প। এ প্রযুক্তিতে কম কয়লা পুড়িয়ে বেশি বিদ্যুৎ উৎপাদন করা যায়। নতুন এই প্রযুক্তির মাধ্যমে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ প্রকল্প গড়ে উঠছে। এখানে পরিবেশ দূষণের কোনো আশঙ্কা নেই।’
বিদেশি ব্যাংকের অর্থায়নে বেসরকারি খাতের বিনিয়োগে বড় কয়লা বিদ্যুৎকেন্দ্র বাংলাদেশে এটাই প্রথম। এই কেন্দ্র বাণিজ্যিক উৎপাদনে গেলে অন্যান্য কয়লাভিত্তিক প্রকল্প থেকে নেয়া বিদ্যুতের দামে প্রতিযোগিতা সৃষ্টি হবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
গত বছরের জুনে বিদ্যুৎকেন্দ্র পরিদর্শন করেছিলেন বাংলাদেশে নিযুক্ত চীনের রাষ্ট্রদূত লি জিমিং। এ সময় গত ডিসেম্বর থেকে বাণিজ্যিকভাবে বিদ্যুৎ উৎপাদন শুরুর কথা জানানো হয়েছিল।২০১৬ সালে বেসরকারি খাতের সবচেয়ে বড় এই বিদ্যুৎ প্রকল্প বাস্তবায়নে বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (পিডিবি) ও এসএস পাওয়ারের মধ্যে চুক্তি সই হয়। পাশাপাশি বিদ্যুৎ কেনাবেচা সংক্রান্ত চুক্তিও সই হয়। ওই বছরই বিদ্যুৎকেন্দ্রের কাজ যৌথভাবে উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং চীনের রাষ্ট্রপতি শি জিনপিং।
চুক্তি অনুযায়ী, এই প্রকল্পের ৭০ শতাংশের মালিকানা থাকছে এস আলম গ্রুপের ছয়টি প্রতিষ্ঠানের। অবশিষ্ট ৩০ শতাংশের মধ্যে সেপকো ২০ শতাংশ এবং চীনের আরেক প্রতিষ্ঠান এইচটিজি ১০ শতাংশের মালিক। চুক্তিতে ৪৫ মাসের মধ্যে প্রকল্প শেষ করার বাধ্যবাধকতা ছিল। সে হিসাবে ২০১৯ সালের ১৬ নভেম্বর কেন্দ্রটিতে বাণিজ্যিক উৎপাদন শুরু হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু নির্ধারিত সময়ে প্রকল্পের কাজ শেষ না হওয়ায় পরে সময় বাড়ানো হয়। চুক্তি অনুযায়ী পিডিবি ২৫ বছর ধরে এই কেন্দ্রে উৎপাদিত সব বিদ্যুৎ কিনবে।
বঙ্গোপসাগরের তীরে বাঁশখালীর গণ্ডামারায় ৬০৬ একর জমিতে গড়ে উঠছে এই বিদ্যুৎকেন্দ্র। দুই ইউনিটের প্রতিটির উৎপাদনক্ষমতা ৬৬০ মেগাওয়াট। উৎপাদিত বিদ্যুৎ সরবরাহের জন্য বাঁশখালী থেকে চট্টগ্রামের মদুনাঘাট পর্যন্ত সঞ্চালন লাইনের ১৯৮টি টাওয়ার বসানো হয়েছে। মদুনাঘাট সাব-স্টেশনে যে গ্রিড আছে, সেই গ্রিডে ১৩২০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ সঞ্চালিত হবে। সঞ্চালন লাইনটি তৈরি করেছে পাওয়ার গ্রিড কোম্পানি অব বাংলাদেশ (পিজিসিবি)।
সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, আমদানিনির্ভর কয়লায় চলবে ‘এসএস পাওয়ার ওয়ান’ বিদ্যুৎকেন্দ্র। এসব কয়লা আমদানি হবে ইন্দোনেশিয়া থেকে। তবে প্রয়োজনে বিকল্প হিসেবে অস্ট্রেলিয়া থেকে কয়লা আমদানি করা হবে প্রকল্পটিতে। এসব কয়লা খালাসের জন্য সাগরতীরে নির্মাণ করা হয়েছে একটি বড় জেটি।